পাঁচটি কবিতা /
সুমন মল্লিক
__________________________________________
বিরহ
তুমি শহর ছেড়ে
যাবার পর
প্রতিটা
দীর্ঘশ্বাস জুড়ে জুড়ে
তৈরি হ’ল বিসর্জন ৷
কতটুকু ক্ষতি হলে
মানুষ পাথর হয়
কিংবা কতটুকু ক্ষয়
হলে
দু’হাত ভরে ওঠে অন্তরালের পিপাসায়,
এখন বোঝা যায় ৷
পিঠে ঠেকে যাওয়া
দেয়াল তো আসলে
দেয়াল নয় কোন, তোমার অচিন শরীর –
ছায়া নেই, ছাপ নেই, শুধু সিঁথি ভর্তি বেদনা ৷
এই যে কাঙাল কবি
হয়ে ঘোরে,
ভাঙচুরে গুছিয়ে
রাখে শ্বাসে মেখে নেয়া শ্বাস...
শুনতে পাও তার
মনের বীণা ? দেখতে কি পাও
চাঁদের ভেতর কীভাবে সে কবর খোঁড়ে ?
•••
কুয়াশাকে লিখতে
গিয়ে
কুয়াশাকে লিখতে
গিয়ে নিজেই কুয়াশা হয়ে উঠছে
যে প্রেমিক, তার বুক বরাবর উড়ে যায় স্বপ্নছাই ৷
আবছা যতটুকু দেখা, তাকে দেখাই যায় শুধু,
কথা হয় না, ছোঁয়া হয় না, বোঝা যায় না
তার ভেতরেও বাকি
আছে কিনা ক্ষোভ অথবা ক্ষমা ৷
কী দারুণভাবে ফিরে
ফিরে আসে
বেলোয়ারি বিকেল, হুঁশ গায়েব করা এক একটা দৃশ্য...
প্রেমিকের ঘরবাড়ি
পোড়ে প্রেমের আগুনে, অথচ
দু’চোখে ফাগুন সাজিয়ে ঝেড়েমুছে রাখে স্মৃতির রেকাব
৷
বিন্দু বিন্দু
বিবশ হয়, সিন্ধু সিন্ধু হয়ে ওঠে মন –
মন জানে মনের মায়া, সে কি আর কবিতায় লেখা যায়...
কত কী লিখতে চাইছো
প্রেমিক, পারছো না, কিছুই পারছো না ৷
হারিয়ে ফেলা
প্রেমিকার মা-হবার খবরে কী করতে হয় জানো না ;
তাই উল্লাস বলতে
বলতে গ্লাসে ঢেলে নিচ্ছো প্রিয় সোনালি বিষ ৷
•••
অসম্ভবের সাঁকো
বুঝেও বুঝিনা কেন
হেঁটে চলে যাই...
চোখে-মুখে আছড়ে
পড়ে
আদিগন্ত চুলের ঝরনা ৷
দু’বাহুর মাঝে যতটুকু পৃথিবী,
তার আবর্তনের মাঝে
আমিও ঘুরি
বাউল ফকিরের মতো ৷
অথচ আমার ভেতর
স্থির বসে থাকে
একটি বিস্ময় – সুপ্রাচীন, অপার...
সেই বিস্ময়ের পেছন
পেছন হাঁটি
আর পিছিয়ে যেতে
থাকে অসম্ভবের সাঁকো ৷
•••
ব্যথা
একটি বিচ্ছেদ
এভাবে চিরায়ত হবে ভাবিনি ৷
নবান্নের ধানের
মতো আমি তাকে দু’হাত ভরে
ঘরে তুলে রাখি ; বুকেও...
উল্টোদিকের পথ
এঁকেবেঁকে বহু আগেই উধাও,
তারই মলিন চিহ্ন
ছুঁয়ে পাথর হই –
পাথরের মাঝে কী দারুণ সন্তাপ !
বিচ্ছেদের পায়ের
নীচে যে বীজ আমরা রেখেছি,
দ্যাখো, বারো বসন্ত পর তা এখন
ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ এক জারুল ৷
সময়ে-অসময়ে এর
নীচে বসেই
মনের মণিকোঠায়
রাখা স্মৃতিকে
বের করে দেখি...
আরও নতুন হয়ে ওঠে ব্যথা ৷
•••
আরও একটা
বসন্তোৎসব
বেলা করে ঘুম থেকে
উঠি ৷ উঠে বসি না ৷ শুয়ে শুয়ে
দিনটাকে
ক্যালেন্ডারের বিপরীতে ঠেলে চলি...
প্রতিবছর এই দিনে
আমার ঘরে ঋতুবদল ঘটে, আমি
চোখে-মুখে জল না
দিয়েই বসে পড়ি টেবিলে, অনেক
আগের এরকমই একটা
দিনের ছবি আঁকি
অক্ষরে অক্ষর সাজিয়ে –
সেদিনই প্রথম
কাছাকাছি আসা, সেদিনই প্রথমবার
মনে রং লেগেছিল
দারুণ, সেদিনই আমার কবিতায়
বাসা বেঁধেছিল ফাগুনের নতুন আগুন ৷
ফাগুন ছিঁড়ে গেছে, আগুন নিভে গেছে, আমি কেন তবু
পলাশ বিছিয়ে বসে
থাকি ছাদে ? কেন লুকিয়ে রাখি
আমার ভালথাকার সেই দিন ?
আবির স্পর্শ করলে
এখন আমার শরীর পুড়তে থাকে ;
পোড়া শরীরে পুড়ে
ছাই হয় আরও একটা বসন্তোৎসব ৷
•••
কবি পরিচিতি :
_____________
সুমন মল্লিকের
জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ৷ বর্তমানে শিলিগুড়ি নিবাসী ৷ পেশায় স্কুল শিক্ষক ৷
তার প্রকাশিত
কবিতার বইগুলি হ’ল :
আর্দ্র নিশাত
(২০১৫), মনকেমনের হাউল (২০১৫), অগ্নিগোলাপ ও শাশ্বত ক্যাটাসট্রফি (২০১৭), মাধুরীপ্রসব (২০১৮),
শল্য কিংবা
বিশল্যকরণী (২০১৮), প্রলাপসিন্ধু (২০২০)
সম্পাদনা :
প্রাক্তন সম্পাদক
: উত্তরের কবিমন পত্রিকা
বর্তমান সম্পাদক :
শিলিগুড়ি জংশন পত্রিকা
সম্পাদনা করছেন
উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলার পৃথক পৃথক কবিতা সংকলন
No comments:
Post a Comment