তাপসকিরণ রায়ের
কবিতা--
শ্রাবণধারা
কখনও চোখের পলক
ব্যাপে শ্রাবণধারা নেমে আসে
নির্জনতা ভেঙে
সেখানে শব্দরূপগন্ধময়--
আদুড় গায়ের
মেয়েটি বৃষ্টির ছলকে নেচে যাচ্ছে।
সেই সাঁওতালি
মেয়েটি ভেজাগন্ধ
ও সোঁদামাটির
আলাপনে
আপনি আপনি হেলে
দুলে উঠছিল।
ঝমাঝম বৃষ্টিরণনের
মাঝখান দিয়ে এক সুর বেজে
উঠছিল।
তাকে সে চিনতে
পেরেছিল--
কোথাও তো বুকের
মাঝ থেকে মাদল বেজে উঠছিল।
পুরুষালী ঘ্রাণে ও
ক্রমশ জেগে উঠছিল,
এমনি বর্ষার
গন্ধের তার শরীর পিপাসা
এমনি শীতালী
অগ্নিতাপের মন তার,
কাঁঠালিচাঁপার
খোঁপা ভাঙা এক ঢাল চুল তার
পিঠ ও নিতম্ব বেয়ে
নেমে গেছে
তবু সমস্ত
শ্রাবণধারা তার স্তন খুলে নিতম্ব আশ্রয় বেয়ে
নিচে, ক্রমশ আরও নিচে নেমে যাচ্ছে,,,
কবিতার অন্তর্দাহ
কবিতার হৃদয়ে
অন্তর্দাহ চলছিল--
কবিতা জ্বলে যেতে
যেতে শেষ অপেক্ষায় ছিল
আগুন নিভে গেলে
তার দগদগে ঘায়ের শরীর
স্মৃতির মাঝে কেউ
বলল,
এই তো সময়, লেখো কবিতা তুমি, কবিতা লেখ--
একটা গানের মাঝে
জীবন,
আক্রান্ত কথাগুলি
তবুও যন্ত্রণা দিচ্ছিল।
মনে সেই উচ্চাটন
দেখো
কিছু কিছু মৈথুন
যন্ত্রণা তুলে রাখি--
উচ্ছিষ্ট ধোঁয়া
উঠছে আকাশে বাতাসে
এবং দেহে ও মনের
উদ্বেগ আধার,
যন্ত্রণা কবিতার
ছেঁড়া পাতায়
আন্তরিক শব্দগুলি
উঠে আসে মনভাসে।
বিদ্রোহ...কবিতা
বিদ্রোহ, তবু কবিতার মাঝখানে
এক ভুখা মানুষের
মন থেকে রং খসে যেতে যেতে
সেও ঘষে-মেজে
নিচ্ছে তার লেখনী।
কবিতা বিদ্রোহী
হতে হতে তার আস্ফালন দুহাত
আকাশে উঠে আসে।
তার সন্ধিক্ষণ' ভেঙে বেরিয়ে আসে কিছু শব্দের বীজ।
সূক্ষ্ম জীবনের
মাঝে লুকিয়ে থাকে শব্দের ঝাঁক
অনর্গল বেরিয়ে
আসে সে সব রহস্যময় ভাষ্য,
ভেঙে গুড়িয়ে
যাওয়ার আগে
গান হয়ে উঠে আসে সংগ্রামী কবিতা।
কবিতা, অনাহার
শোনো আমিও কবিতা
লিখি,
খালাসী হয়ে
ট্রাকের দড়ি ধরে ঝাঁপ দিই নিচে
পিঠের বোঝায়
নতজানু দেহ
মাটির বড়
কাছাকাছি থেকে গন্ধ পাই
কবিতা বুনুনির।
সেখানেই বীজবৃক্ষ, সময় প্রবাহে শুকনো ডাল,
কি ভাবে জন্ম নেয়
এক মৃতদেহ থেকে পুনর্বার
সবুজ ঘাস !
রিকশার প্যাডেল
চেপে
ঘাম রোদ্দুরের
শরীর পেরিয়ে
শেষে ফিরে আসি আপন
ঘরে। .
নির্জনতার আড়ালে
আমিও চোখ রাখতাম,
আমিও আঁচড় কাটতাম
কাগজে,
আর সেখানেও ফুটতো
ভাষা, মনের ভুখা মাটিতে
কোথাও তো কবিতা
গাছ হয়ে জন্ম নিচ্ছে--
তার কঠোর পাঁজরেও
অনাহারী সংগ্রাম চলছে।
No comments:
Post a Comment