প্রচ্ছদ

প্রচ্ছদ

শ্যামা প্রসাদ সরকার

 

শ্যামা প্রসাদ সরকার

 

সুরঞ্জনা'  কাছে

 

সুরঞ্জনা'  কাছে অনেক ঋণ আমার,

ওই রোগাসোগা দূর্বলদেহী মেয়েটা যখন

পায়ের তলায় রাধাচূড়া মাড়িয়ে এসে

কলেজের গেটে এসে দাঁড়াত।

মনে হত এ পৃথিবীতে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই! 

 

মধ‍্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটার  দুচোখে ছিল 

আকাশে ডানা মেলবার স্বপ্নের ভীড়,

ভোরবেলার শূচিতা সর্বাঙ্গে মেখে স্ফটিকের মত

খুব সহজে ওর দুচোখে নামিয়ে আনতো আনন্দের আয়নাটাকে।

 

সুরঞ্জনা'র কাছে অনেক ঋণ আমার।

বাবা মারা যাওয়ার পর যে উদভ্রান্ত যুবককে,

যখন করুণা করাই ছিল দস্তুরআর অবজ্ঞাই

ছিল ভিখারীদের বর্জন করার একমাত্র সোজা পথ

তখন সুরঞ্জনা আমায় জারুলগাছের মত

ডালপালা মেলে  দিয়ে দু হাতের বেড়ীতে বেঁধে রেখেছিল।

 

ও প্রায়ই গাইত- "কেন পান্থ হে চঞ্চলতা!"

টিউশানির টাকা জমিয়ে ও কিনেছিল একটা দামী কাগজের  খাতা.. আর আমায় উপহার দিয়ে বলেছিল অব‍্যক্ত কথা যেগুলো কবিতার মত ইথার তরঙ্গে ভাসে!

তাদেরকে বন্দী করে এনে দিতে হবে আমায়।

সুরঞ্জনা'র চোখের দিকে তাকাতে পারিনি সেদিন,শুধু হাতদুটো মুঠোয় নিয়ে বলেছিলাম -

"রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপরতন আশা করি!"

 

কবিতা লিখলে পেট ভরেনা কারোর,

একটা ওষুধের দোকানে কাজ নিলাম,

শহর থেকে শহরতলীর দূরেই থাকি একাএকা

 

সুরঞ্জনার বিয়ের পাত্র দেখা চলছে 

খবরটা কানে এল কানাঘুষো...

তখন হেমন্তকাল, পাতাগুলো ঝরে পড়ছে

অসীম শূন‍্যতা উজাড় করতে গিয়ে থমকে

দাঁড়িয়ে আছে একফালি  অঘ্রাণের চাঁদ।

 

কি এক তামাদি দলিলের মত খাতাখানা,

ভরাতে ভরাতে হঠাৎ যেন থেমে গেছি শাপদগ্ধ হয়ে। 

 

সুরঞ্জনার সাথে দেখাসাক্ষাৎ  কম হয় এখন।

রেলে চাকরি করে  তার সর্বসুলক্ষণ পাত্রটি,

বয়সে একটু বড় তবুও সোনার আংটি  সে!

 

উপযুক্ত তো বটেই...বিজয়ীর পরাক্রমে সে

সুরঞ্জনার হাতদুটো ধরে চলে গেল একদিন।

সেই হাত যে হাতে লেবুপাতার গন্ধ মাখানো..

 

সুরঞ্জনা'র কাছে অনেক ঋণ আমার।

খাতায় যেকটা পাতা তবুও বাকি থেকে গেল

সেগুলোকে কথার আঁচড়ে কলঙ্কিত করলাম না!

ঘুমের ওষুধের পাতা উপুড় করে দিলাম 

রাতে ঘুমহারা একাকীত্বে চিরকালের শয‍্যায়। 

 

" মরি লো মরি....আমায় বাঁশীতে ডেকেছে কে.."

সুরঞ্জনা গাইছিল সেই রাত্রে আমার শিয়রে বসে!

ও নিজে  সে রাতে না গাইলে কোনও দিনও আমার ধমনীতে গানটা বইত না। 

 

মনে হচ্ছিল মস্তিষ্ক অসার হয়ে

থেমে যাবার আগে.....বাঁশীতেই ডাক দিচ্ছে সে!

 

সুরঞ্জনা'র কাছে আমার শুধু অনেক ঋণ রয়েই গেল!

No comments:

Post a Comment

স্বরধ্বনির আগামী অনলাইন সংখ্যা প্রকাশিত হবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে।লেখা এই এড্রেসে--tkray1950@gmai